রম্যরচনা---" কথার কথা " - নবগোপাল চৌধুরী -2

 


  কথার কথা--কথা প্রসঙ্গে-- কথা মুখ ।

  আর কেউ জানুক চাই না জানুক, অন্ততঃ বাঙালি মাত্রই জানেন, কথার মতো প্রতাপশালী বস্তু আর কিছুই নেই । তাই বাঙালি মাত্রই কথার ভুখা ।কথা পেলে আর কিছুই চায় না  ; তা' পরনিন্দা পরচর্চাই  হো'ক কিংবা  নিজের ঢাক নিজে পেটানোতেই হোক। 

বড় শখ --বকবক পকপক, সারাক্ষণ তা'র জিভ যেন যেন লকলক করছে ।

  কথা ব্রহ্ম, কথা দম্ভ, কথা স্তম্ভ।  কথাগুলো শুনে নিশ্চিত হচ্ছেন হতভম্ব! কিন্তু কন্ঠ নিঃসৃত এই বাণী যে কতখানি শক্তিশালী-- ধ্যানী,জ্ঞানী, বিজ্ঞানী  সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন।   

 এই কথা-- বাক্ বাক্য  --বাকচাতুর্য  ,যা কিনা আদিকাল থেকে মনুষ্যকূলকে বাগাড়ম্বরে চাকচিক্য এনে নলিনাক্ষ্য ,বিরূপাক্ষ অবধি কব্জা করতে পেরেছে।   এই বাক্ অর্থাৎ- সরস্বতী বাগিন্দ্রিয়কে 

আয়ত্ব করেই , বাগবিতণ্ডা ,বাগবৈদগ্ধ্য, বাগ্মী, বাচাল বাচস্পতিতে পরিণত হ'তে পেরেছে ।

  কথার মাহাত্ম্য অসীম । কথায় কাঁদা-- কথায় হাসা,

কথায় কথায় ভালোবাসা ; কথায় সাধা-- কথায় বাঁধা 

কৃষ্ণ প্রেমে জড়ায় রাধা, নামে বিভোর জগা- মাধা,

মিলন নিয়েই কালো- সাদা , ভুবন জোড়া গোলকধাঁধা ।

  এই কথার বাধাতেইতো নারাণদার বিয়েই হ'লোনা। 

মেয়ে দেখতে গিয়ে ঠোঁট কাটা কটু কথা বলে দিচ্ছি ল ।হারানদার মত পটু হতে কোনদিনই পারল না!

হারানদা কোনো ব্যাপারেই চটে না ।তাই যে রমনীই হো'ক কি গৃহিনীই হো'ক, ঝট করে পটে যায় । রাতারাতি কোনো কান্ডও ঘটে যায়। সক্কাল   বেলাতেই মহল্লায় রটে যায়  । বৌদিমণি  শুনেই চটে বাপের বাড়ি পালায় ।

  তাই কথা নিয়ে বেশি চাটাচাটি -ঘাঁটাঘাঁটি বা কথা  কাটাকাটি করা ঠিক নয় । কমসে কম একটু সংযম দরকার । নয়তো লঘু কারণে গুরু দন্ড--মাথা ফাটাফাটি  গলা কাটাকাটি হয়ে গেলে স-- ব মাটি;

থানা- পুলিশ- আইন-আদালত হাঁটাহাঁটি ছোটাছুটির  শেষ  থাকবে না  ।

 তাই  বলি বন্ধু যেমন -- বদ কথায় আনে ক্রোধ-- হারায় বোধ, জাগে স্পৃহা  নিতে প্রতিশোধ ; তেমনি  ভালো কথা  জাগায় ব্যাকুলতা, মায়া--উদারতা  জাগায় মানবতা; কথায় শিশু কিশোর হয়, কথায় প্রাণ যে বিভোর হয় । কথা যুবতীর শখ, কথায় মোহিত যুবক। কথাই কাছে টানে,  কথাই প্রেম আনে

কথা আদরেই স্নেহ, সঁপে কথাতেই দেহ । কথাতেই    জিতি, কথাতেই প্রীতি, কথাতেই রীতি,  কথাতেই নীতি, কথাতেই সুর কথাতেই গীতি, যুগ যুগ টেকা ভুবনের স্মৃতি। সুতরাং পাঠক বুঝতেই পারছেন-- কথার করিশমা অর্থাৎ কথার মহিমা কি বিশাল  বৈচিত্র পূর্ণ । 

  কথা বানায় উপন্যাস, কথায় খ্যাত বেদব্যাস, কথায়  চলে শিলান্যাস, কথা ছড়ায়  বদভ্যাস।  কথা  বেচেইতো বিক্রেতা, কথা ভাষণ দিয়েই নেতা। 

কথায় মাত্রা আনে বোল,কথায় দেয় যে খুলে 'পোল,'

সুতরাং বুঝতেই পারছেন, কথা কখনো সুন্দর- মনোহর, কখনো বদখত- ভয়ঙ্কর!

  মহাভারত কয়-- মন্দ কথায় পরাজয় ।শেখায়      রামায়ণ --- নীতি আদর্শেই জীবন। কথা উপনিষদ বেদ, কথা ভোলায় ভেদাভেদ। কথা ছিল বলেই শ্রুতি -- গীতা অমর মহাদ্যুতি। যুগযুগান্তর এই কথার খেলায় মেতেই আমরা  আমাদের একঘেয়েমি  জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে রেখেছি । সৃষ্টির সম্ভাবনা কে প্রাচুর্যময় করে পৌঁছে দিয়েছি জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নত পর্যায়ে ।

     সুতরাং  পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কথা চাই , সে প্রিয় কথাই হো'ক বা অপ্রিয় । কথা  সুস্থ রাখে মন, কথায় আনে উপার্জন ; কথায়  ছড়িয়ে গুগলি ধাঁধা, এখন বিখ্যাত সৌরভ 'দাদা' । কথায় কথায় চাঁদা, 

নানান যে জাল ফাঁদা; কথায়  ঢাকে কালো- সাদা। 

এক দিনেই ঘেঁটে কি লাভ এতো কাদা  ?

     সুতরাং  বিষয়টা এখানেই থাক ।।

                            "  অর্ধ সমাপ্ত "

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ