নেতাজি জীবিত ' এই ছিল বালকের ওপর মিথ্যা মামলার কারণ : ৩ - বিজয় চক্রবর্তী



তাপ উত্তাপ:১৯৯৩ সাল। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের শাসন তুঙ্গে। ২৯ সে জুন মাঝ রাতে কলকাতার অদূরে শুকচরে গঙ্গার পাশেই বালক ব্রহ্মচারীর আশ্রমে পুলিশ ও বাম সরকারের প্রধান দল সিপিএমের ক্যাডাররা ,শুরু করে ' অপারেশন সৎকার '। ভক্ত ,শিষ্য ও অনুগামীদের হেফাজত থেকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয় ভক্তদের দাবি অনুযায়ী নির্বিকল্প সমাধিতে থাকা বালক ব্রহ্মচারীর দেহ। ওই ৯৩ সালেই ২৭ এ মার্চ বালক ঠাকুর বিরাট এক জনসভা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের একেবারে সীমানা ঘেষা নদীয়া জেলার গেদে এলাকায়। সেই জনসভার মঞ্চ থেকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জোরের সঙ্গে বলেন,' যে অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে তাতে আমি যদি এখনো মাঠে না নামি তবে আমার গুরুগিরি করা ছেড়ে দেওয়া উচিত। না নামলে সন্তানদের প্রতি আমার বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আরো আগে বিপ্লব হওয়া উচিত ছিল। আর এক মুহূর্ত আমার এখানে থাকা উচিত নয়। নেতাজিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টাতেই এত নিন্দা ,অপবাদ, অপজস মামলা-মোকদ্দমা। তাই তোমাদের বলছি কারো কথায় চলবে না। গুজবে কান দেবেনা।' 

বালক ব্রহ্মচারী ভক্তদের দাবি, অপারেশন সৎকারের পরই বালক ব্রহ্মচারীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ সোনা দানা, টাকা - পয়সা, অন্যান্য দামি জিনিস ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র লুটপাট করে নেয়। সুুখচরে তার আশ্রম বালক ধাম, বাগানবাড়ি, কামধেনু বাগান, গবেষণা কেন্দ্র এই সব কিছু নিয়েই ষড়যন্ত্র শুরু হলো। 
ভক্ত ও সন্তান দলের সংগঠকদের বিভ্রান্ত ও বিপথে চালনা করতে কিছু মানুষ টাকার থলি হাতে নিয়ে নেমে পড়ল। তারা বললেন সন্তান দলের সঙ্গে নেতাজির কোন সম্পর্ক নেই। নেতাজি মৃত। বালক ব্রহ্মচারীর ও মৃত্যু হয়েছে। সন্তান দল এখন শুধু বালক ব্রহ্মচারীর দেখানো আধ্যাত্মিক পথেই চলবে। নাম গান ,সংকীর্তন ও আধ্যাত্মিক প্রচার করবে। নেতাজির সঙ্গে জড়িত কোন বক্তব্যই সন্তান দল আর প্রচার করবে না। বিভিন্ন জায়গায় মিটিং ও সভা করে এসব কথা প্রচার করা হলো। সংগঠনকে টুকরো করার খেলা শুরু হল।

অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জয়নারায়ণ বাবুর অভিযোগ, বালক ঠাকুরের স্বপ্নের সংগঠনকে নেতাজী শূন্য করার খেলা চলছে। নেতাজি চিন্তা ,নেতাজি স্বপ্ন, নেতাজি আদর্শের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল সন্তান দল। সেই সংগঠন থেকে নেতাজীকেই বাদ দিতে উঠে পড়ে লাগলো কিছু সুযোগসন্ধানী স্বার্থান্বেষী মানুষ।

নেতাজি গবেষক ডক্টর জয়ন্ত চৌধুরীর মতে নেতাজি ছিলেন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও বিপ্লবী। তাই তার উপরে আস্থা রেখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে রোমা রোলা পর্যন্ত বহু বুদ্ধিজীবী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা। ভারতীয় বামপন্থীদের বড় একটা অংশ কীর্তি কিষাণ পার্টি,পূর্ব এশিয়ার হিন্দুত্ববাদী নেতৃত্ব থেকে শুরু করে উর্দুভাষী নেতৃত্ব সবাই ছিলেন  সুভাষ অনুরাগী।।
জয়নারায়ণবাবু জানান আশির দশকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যমগ্রামে ফরওয়ার্ড ব্লকের ডাকা নেতাজি জয়ন্তীর এক বিরাট সমাবেশে বালক ব্রহ্মচারী ভাষণ দিয়েছিলেন।। বলেছিলেন, নেতাজি শুধু জীবিত আছেন শুধু তাইই নয়,আধ্যাত্মিক সাধনা র জোরে তিনি অটুট স্বাস্থ্যেরও অধিকারী রয়েছেন।তাঁর আরো দাবি ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বই জানতেন বালক ঠাকুর কি করতে চান,কি তার আসল উদ্দেশ্য।। সেই জন্যই তার বিরুদ্ধে হয়েছিল চক্রান্ত, সাজানো হয়েছিল মিথ্যে মামলা। 
কিন্তু এত কিছু কর বালক ঠাকুরকে রোখা গেল না। ক্রমাগত বেড়েই চলেছিল  তাঁর সংগঠনের সদস্য সংখ্যা।।
CIA সমেত অনেক বাইরের গোয়েন্দা বিভাগও  নড়ে চড়ে বসেছিল বালকের সংগঠনের  একটিভিটি দেখে।।

 চলবে ....

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ