তার আগের রাতেই কলকাতার কাছে সুখচর ধামে পুলিশি অভিযান চালিয়ে তুলে আনা হয়েছে কয়েক কোটি শিষ্যের গুরুর মৃতদেহ ।
সিপিএম নেতা নেপাল দেব ভট্টাচার্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের আলোকচিত্রীদের বলেছিলেন, ভেতরে ঢোকা যাবে না, ছবি তোলাও নিষেধ।ইনিই ছিলেন সুখচর ধামের পুলিশ বাহিনী ও সিপিএম এর ক্যাডারদের নেতৃত্বে। নেপথ্যে ছিলেন বাম জমানার আরেক বড় নেতা তথা মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীও।
কিন্তু এত কিছুর পরও বিতর্ক এড়ানো গেল না।
বালক ব্রহ্মচারী সংগঠনের এক বড় মাপের নেতার প্রশ্ন যে, ১৯৯৩ সালের ৮ই এপ্রিল বালক ব্রহ্মচারী মহারাজ কে ভর্তি করানো হয়, কোঠারি মেডিকেল হাসপাতালে। ৫ই মে চিকিৎসকেরা ওনার মৃত্যু ঘোষণা করেন। এরপর ভক্ত শিষ্যরা বালকের তথাকথিত দেহ আশ্রমে নিয়ে যায়।।
প্রশ্ন হল ,ডেথ সার্টিফিকেটে ওনার মৃত্যুর তারিখ ৮ এপ্রিল লেখা হল কেন(বাম সরকারের সমর্থক তৎকালীন একটি সান্ধ দৈনিকের প্রতিবেদন অনুসারে)? উনি বলেন। তাহলে কি যে দিন বালক ব্রহ্মচারীকে কোঠারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল, সেদিনই ওনার মৃত্যু হয়েছিল? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে কি পরবর্তী ২৭ দিন ধরে হাসপাতালে ওই মৃতদেহের চিকিৎসা করা হয়েছিল?
তাঁর বক্তব্য, মাঝের ৩০ বছর কেটে গেলেও আজও জবাব মেলে নি।। এই প্রশ্নের জবাব মেলা দরকার। বালক ব্রহ্মচারীর নিজের হাতে গড়া সন্তান দল।
এই সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন চিত্ত সিকদার (প্রয়াত)।তাঁর দাবি ছিল, 'নির্বিকল্প সমাধি' অবাস্তব নয়।। ১৯৬০ সালে কলকাতার ভূপেন বসু এভিনিউয়ের একটি ঠিকানায় বালক ব্রহ্মচারী টানা ২২ দিন নির্বিকল্প সমাধি অবস্থায় ছিলেন। সেই সময় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও এ খবর প্রকাশিত হয়েছিল।।
তাঁর আরো অভিযোগ ছিল , বালক ব্রহ্মচারী যেহেতু নেতাজি অনুরক্ত ছিলেন, বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজীর মৃত্যু হয়নি এ কথা বিশ্বাস ও প্রচার করতেন/ নেতাজি ফিরে আসবে একথা লক্ষ লক্ষ জনসভায় উনি চিৎকার করে বলতেন।সেই জন্যই বহু রকমের ষড়যন্ত্রের জাল অনেক দিন থেকেই বোনা হচ্ছিল । বালক ব্রহ্মচারীর তথাকথিত মৃতদেহ যখন সুখচর ধামে রাখা হয়েছিল।তখন একাধিকবার বিশিষ্ট চিকিৎসক অমল সাঁতরা সেই দেহ পরীক্ষা করতে গেছিলেন।। তিনি তার রিপোর্টে বারবার একই কথা লেখেন 'চমৎকার আছে বালক ব্রহ্মচারীর শরীর'।
চিত্ত শিকদার বলেন নির্বিকল্প অবস্থায় পৌঁছে গেলে বাইরে থেকে বোঝা যায় না যে প্রাণ আছে, কি নেই। সমাধি শেষে তার দেহে আবার ফিরে আসে প্রাণ।
কল্যাণী বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত অর্থনীতি অধ্যাপক ডঃ জয়নারায়ণ বাবুর পরিষ্কার বক্তব্য বালক ব্রহ্মচারীর দেহ যখন 56 দিন ধরে সুখচর আশ্রমে রাখা ছিল, তখন একাধিকবার সেখানে গিয়েছি। পচন তো দূরের কথা উনার দেহে কোন রকম বিকৃতিই ছিল না। তাঁর দাবি নির্বিকল্প অবস্থায় থাকা বালক ব্রহ্মচারীর দেহ আশ্রম থেকেই গায়েব হয়েছিল।
তিনি জানান ৩০ জুন ভোর বেলায় রতন বাবুর ঘাটে কফিন বন্দী হয়ে এসেছিল এক মহিলার দেহ। এই পচা গলা দেহ থেকে এতই উৎকট পচা গন্ধ বেরোচ্ছিল যে, শ্মশানে উপস্থিত পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে সিপিএমের ক্যাডারবাহিনী সবাই নাকে রুমাল চেপে দাঁড়িয়েছিল। চিত্ত বাবুর দাবি ছিল, ঐদিন যাকে দাহ করা হয়েছিল সেটি, ৮ ই এপ্রিলের ইস্যু করা ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী এক মহিলার মৃতদেহ। ওই মৃত দেহ ছাড়া অন্য কোন মৃতদেহ সেদিন শ্মশানে আসে নি। মৃতদেহ ঢোকানোর কিছুক্ষণ পর চুল্লিও খারাপ হয়ে যায়। অথচ বালক ঠাকুরের ক্ষেত্রে তারিখ টা অফিসিয়াল ডেথ সার্টিফিকেট অনুযায়ী ৫ মে। তাহলে ৮ ই এপ্রিল সার্টিফিকেট অনুযায়ী কার মৃতদেহ সেদিন পড়ানো হয়েছিল??
ত্রিপুরা বাসিন্দা অরুন রায় সরকারের দাবি সাত কোটি শিষ্যের গুরু বালক ব্রহ্মচারীর দেহ কোথায় গেল তা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হোক।।
0 মন্তব্যসমূহ
আপনাকে জানাই ধন্যবাদ