দূরন্ত র্ঘূর্ণি - মধুমিতা তরফদার

 

চারটে মেয়ে বাইপাসের ধারে ছেলেটার অর্ধনগ্ন অচৈতন্য দেহটাকে লাথ মেরে  ফেলে দিলো।তারপর হাত ঝেড়ে নিজেদের জামাকাপড় ঠিক করে  নিলো।এবারে চারজনে কথা বলতে বলতে বস্তির দিকে এগিয়ে চললো।


  ওরা  দলে ৫জন  মানে টুসি,টুংকি,বুল্টি, মামন আর শীলা খালপাড়ের বস্তিতে থাকে। সরকারী উদ্বাস্তু বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি তে পড়ে।বয়েস সবার সাতেরো-আঠেরোর মধ্যে।ভীষণরকম ডাকাবুকো ধরণের মেয়ে। যেখানেই মেয়েদের প্রতি অবিচার হয় ওরা সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মদ খেয়ে এসে বাড়ীর পুরুষ মানুষেরা ওদের জ্বালায় আর বৌ পেটাতে পারে না।পছন্দ হয়েছে বলে বস্তির মস্তানগুলো আর সহজে মেয়েগুলোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে পারে না। এসব খবর স্কুলের দিদিমণিদের কাছে লোক মারফত পৌঁছে যাচ্ছিল।একদিন স্পোটস টিচার সুমিতাদি ওদের ডেকে বললেন, তোরা তো খুব সমাজসেবা করে বেরাস। একটা দল গঠন কর। নাম হবে ‘দূরন্ত র্ঘূর্ণি’।
ওরা দিদিমণির সাপোর্ট পেয়ে খুব খুশি।


সুমিতাদি বললেন,এবার নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ কর।তবে বুঝবো সমাজের জন্য ভালো কিছু করছিস। সরকারী স্কুলে বিনা পয়সায় পড়তে পাচ্ছিস।তারপর তোদের নিজেদের পছন্দমতো পেশা বেছে নিয়ে একটা ভালো জীবন গড়ে নে।
ওরা তারপর থেকে আরো সংঘবদ্ধ হয়ে থাকে। চেষ্টা করে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে অন্য কাজগুলো করার। বস্তির ছেলেগুলো তো একদম পড়ে না উচ্ছন্নে গেছে। রাতদিন মদ গাঁজা খেয়ে নেশা করে বুঁদ হয়ে থাকে।এখন আবার আনলাইন গেম(জুয়া?) খেলে রোজগার করে। ওটাই অনেকজনের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে ! ঐ ছেলেগুলো দূরন্ত র্ঘূর্ণির এই সমাজসেবা মূলক কাজগুলো একদম পছন্দ করেনা।ওরা চায়, যে মেয়ের সঙ্গে প্রেম করতে চাইবে তাকেই ওদের ডাকে সাড়া দিতেই হবে।আর এরা মা ঠাকুমাদের মতো পড়ে পড়ে মার খেতে চায় না।এদের মধ্যে টুসি ছিল সবচেয়ে মুখরা।দারুণ তর্ক বাধিয়ে দিতো।


  একদিন সন্ধ্যেবেলায় টিউশন পড়ে একা একা ফিরছিল,পাড়ার কয়েকটা ছেলে জবরদস্তি ওকে তুলে নিয়ে যায়।
শিবু ওদের লীডার।ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।টুসি না করতেই সকলে মিলে ওকে রেপ করার প্ল্যান করে। ঐ বজ্জাতগুলো তখন গাঁজার আর মদের নেশায় বুঁদ।
 পরেরদিন সকালে এক দুধ ওয়ালা ওকে রাস্তার ধারে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে।তারপর সবাই মিলে হাসপাতালে নিয়ে যায় । এদিকে টুসির মা বাবা হয়রান।বোনেরাও ছোট। কে এমন কাজ করতে পারে ওদের মাথায় ঢুকছে না। থানায় গিয়ে নালিশ করা হাসপাতালে দৌড়ানো ।
  এদিকে টুংকি রা গোপনে খোঁজখবর করতে শুরু করেছে কে করতে পারে এমন কাজ! শীলা বিশ্বস্তসূত্রে খবর আনলো ঐদিন সিধুর দল ওদিকেই মদ গাঁজা খাচ্ছিল। এরাও দুয়েদুয়ে চার করে সুযোগের অপেক্ষায় রইলো।


 একদিন শিবু একা মোটর সাইকেলে ফিরছিল, এরা রাস্তার দুপাশে নিচের দিকে দড়ি ধরে দাঁড়িয়েছিল।দিলো হ্যাঁচকা টানে উল্টে ফেলে। ছিটকে পড়তেই চোখে স্যানেটাইজার স্প্রে করে টানতে টানতে অন্ধকারের দিকে নিয়ে গেলো।ওদের মুখগুলো ছিল ওড়নায় ঢাকা তাই চেনার অবকাশ ছিল না।তারপর ওর জামাকাপড় ছিঁড়ে সাইকেলের চেন দিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে।ওদের অত্যাচারে আধমরা হয়ে গেলে বাইপাসের ধারে ফেলে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।ওদের মুখে আজ বিজয়ীর হাসি।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ