কবি রবীন্দ্রনাথের ছেলে হয়ে কবিতা লেখা যায় না, বুঝেছিলেন রথীন্দ্রনাথ










তাপ উত্তাপ পত্রিকায় প্রকাশিত 

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র, নিজের জীবনকালে একটি বিশেষ দায়িত্বের ভারে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন যে, তাঁর পিতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, তাঁর ছেলের পক্ষে সেই মানদণ্ডে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক প্রতিভা সৃষ্টিশীলতা এতটাই বিস্তৃত শক্তিশালী ছিল যে, রথীন্দ্রনাথের পক্ষে একই ধরনের প্রতিভার প্রতিফলন ঘটানো চাপের হয়ে উঠেছিল।

তাই রথীন্দ্রনাথ নিজের পথ আলাদা করে নিতে চেয়েছিলেন। তিনি কৃষি বাগানবিদ্যা নিয়ে কাজ করতেন এবং শান্তিনিকেতনের প্রশাসনিক শিক্ষামূলক দায়িত্বগুলো সামলানোর দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি বুঝেছিলেন যে তাঁর পিতার মতো কবি হওয়া বা তার সমকক্ষ কিছু সৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে। এজন্যই তিনি তাঁর নিজের সৃজনশীল ক্ষমতাকে অন্য ক্ষেত্রে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন।


রথীন্দ্রনাথ নিজেকে আলাদাভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে তাঁকে শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথের ছেলের পরিচয়ে নয়, বরং নিজের কাজের জন্য স্বীকৃত করা হয়।

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব থেকে নিজেকে আলাদাভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন বিভিন্ন উপায়ে, যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো:

. কৃষি পরিবেশ নিয়ে কাজ:

রথীন্দ্রনাথ মূলত কৃষি পরিবেশবিদ্যার দিকে মনোযোগ দেন। তিনি কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে অনেকটা অপ্রচলিত এবং নতুন ধারণার সূচনা ছিল। দেশে ফিরে তিনি শান্তিনিকেতন আশপাশের এলাকাগুলোতে আধুনিক কৃষি প্রণালী এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির প্রচলনের চেষ্টা করেন। তাঁর নেতৃত্বে আশ্রম এলাকায় বেশ কিছু প্রকল্প চালু হয়েছিল, যার মাধ্যমে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণ এবং গ্রামীণ উন্নয়নে অবদান রাখেন।


. শান্তিনিকেতনের পরিচালনা উন্নয়ন:

রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর শান্তিনিকেতনের গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেন। তিনি শান্তিনিকেতনের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আধুনিক এবং কার্যকরী করতে প্রচেষ্টা চালান। শিক্ষার পাশাপাশি, তিনি শান্তিনিকেতনের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর সময়ে শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর এবং আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করে।


. আত্মজীবনী সাহিত্যিক কাজ:

যদিও রথীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার মতো বড় মাপের কবি বা সাহিত্যিক হতে চাননি, তবে তিনি কিছু লেখালেখি করেছেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা "অনিল চিত্র" "পিতৃস্মৃতি" তাঁকে একজন চিন্তাশীল এবং পরিপক্ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থাপন করে। এসব রচনায় তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি, অভিজ্ঞতা এবং পিতার সাথে তাঁর সম্পর্কের নানা দিক উঠে এসেছে, যা তাঁকে নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করেছে।

. শান্ত জীবনধারা আধ্যাত্মিকতা:

রথীন্দ্রনাথের জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল তাঁর আধ্যাত্মিকতা এবং নিঃশব্দ জীবনধারা। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাদাসিধে জীবনযাপন পছন্দ করতেন এবং পিতার ভাবাদর্শের প্রভাব থাকলেও, তাঁর নিজস্ব জীবনদর্শন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি জীবনের গভীরতা আত্মোপলব্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন।

এইভাবে রথীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার বিশাল ছায়ার বাইরে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন, যা তাঁকে একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ